This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
পঙ্গপালের মহামারী
১ “তখন ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন, "ফারাও বা ফেরাঊনের-এর কাছে যাও, কারণ আমি তার এবং তার আধিকারিদের হৃদয় কঠোর করেছি, যেন আমি তাদের মধ্যে এই সমস্ত আশ্চর্য সংকেত দেখাতে পারি।"
ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে আদেশ দিলেন ফারাও বা ফেরাউনের কাছে যেতে, কারণ ঈশ্বর ফারাও বা ফেরাউনের মন কঠোর করে দিয়েছেন। এর কারণ হলো, ঈশ্বর মিশরের ওপর তাঁর মহাশক্তির প্রকাশ ঘটাতে চান।
২ "যাতে তুমি তোমার সন্তান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলতে পারো যে আমি মিশরীয়দের কীভাবে কঠিন শাস্তি দিয়েছি এবং তাদের মধ্যে কী কী আশ্চর্য সংকেত দেখিয়েছি, যাতে তোমরা জানতে পারো যে আমিই ঈশ্বর।"
ঈশ্বর চান যে,এই ঘটনাগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক, যাতে তারা জানতে পারে যে সত্যিকারের ঈশ্বর তিনিই।
৩ “মোশি বা মূসা ও আরেন বা হারুন ফারাও বা ফেরাউনের কাছে গিয়ে বললেন, "ঈশ্বর, ইস্রিয়দের ঈশ্বর, এ কথা জিজ্ঞেস করেন: 'তুমি কবে পর্যন্ত নিজেকে নরম করবে না? আমার লোকদের যেতে দাও, যাতে তারা আমার প্রার্থনা করতে পারে।'"
মোশি বা মূসা ফারাও বা ফেরাউনকে সতর্ক করলেন যে,তাকে নরম হতে হবে এবং ইস্রায়েলীয়দের মুক্তি দিতে হবে, যাতে তারা ঈশ্বরের প্রার্থনা করতে পারে।
৪ "যদি তুমি তাদের যেতে না দাও, তবে আমি আগামীকাল তোমার দেশে পঙ্গপাল পাঠাব।"
ফারাও বা ফেরাউনের অবাধ্যতার জন্য ঈশ্বর তাকে আরেকটি মহামারির হুমকি দিলেন—পঙ্গপালের আক্রমণ।
৫ "তারা এত সংখ্যায় আসবে যে তোমরা জমির মাটি দেখতে পাবে না। তারা সেই সব ফসল খেয়ে ফেলবে যা আগের শিলাবৃষ্টির পর অবশিষ্ট ছিল, এমনকি মাঠের সমস্ত গাছও ধ্বংস করবে।"
ঈশ্বর ফারাও বা ফেরাউনকে সতর্ক করলেন যে পঙ্গপাল পুরো দেশটিকে ধ্বংস করবে, যা আগে শিলাবৃষ্টিতে বেঁচে গিয়েছিল।
৬ "তারা তোমার ঘরবাড়ি, তোমার আধিকারিদের ঘর এবং মিশরের সমস্ত ঘরে ঢুকে পড়বে—যেমনটা তোমাদের পূর্বপুরুষেরা কখনো দেখেনি।" তারপর মোশি বা মূসা ফিরে গেলেন।
পঙ্গপালের আক্রমণ এত ভয়াবহ হবে যে এটি মিশরের ইতিহাসে নজিরবিহীন হবে।
৭ “ফারাও বা ফেরাউনের আধিকারিরা বলল, "এই ব্যক্তি আমাদের জন্য বিপদের কারণ হচ্ছে। ওদের চলে যেতে দাও। তুমি কি এখনো বুঝতে পারছ না যে মিশর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে?"ফারাও বা ফেরাউনের উপদেষ্টারা বুঝতে পেরেছিলেন যে,মিশর ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে, তাই তারা ফারাও বা ফেরাউনকে ইস্রায়েলীয়দের মুক্তি দেওয়ার পরামর্শ দিল।
৮ "তারপর মোশি বা মূসা ও আরেন বা হারুনকে ফারাও বা ফেরাউনের কাছে আবার ফিরিয়ে আনা হল। ফারাও বা ফেরাউন বললেন, ‘তোমরা গিয়ে তোমাদের ঈশ্বরের প্রার্থনা করো। কিন্তু বলো তো, কারা কারা যাবে?"
ফারাও বা ফেরাউন ইস্রায়েলীয়দের কিছুটা ছাড় দিতে প্রস্তুত হলেন, কিন্তু তিনি জানতে চাইলেন কারা যাবে। এটি দেখায় যে,তিনি এখনও সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে চাননি। তিনি সম্ভবত শুধু পুরুষদের যেতে দিতে চেয়েছিলেন, যাতে নারীরা ও শিশুরা মিশরে থেকে যায় এবং ইস্রায়েলীয়দের ফিরে আসতে বাধ্য করে।
৯ “মোশি বা মূসা উত্তর দিলেন, "আমরা আমাদের যুবক-বৃদ্ধ, ছেলে-মেয়ে, পশু-সম্পদসহ সবাই যাব। কারণ আমরা আমাদের ঈশ্বরের জন্য উৎসব পালন করব।"মোশি বা মূসা স্পষ্ট করে বললেন যে,ইস্রায়েলীয়রা শুধু পুরুষরা নয়, বরং পুরো সম্প্রদায়সহ যাবে। কারণ ঈশ্বরের প্রার্থনায় প্রত্যেকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
১০ “ফারাও বা ফেরাউন বলল, "যদি আমি তোমাদের নারীদের ও শিশুদের নিয়ে যেতে দিই, তাহলে ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে থাকবেন। কিন্তু স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, তোমাদের কুবুদ্ধি আছে!"
ফারাও বা ফেরাউন মনে করলেন যে, ইস্রায়েলীয়রা পুরো সম্প্রদায় নিয়ে পালিয়ে যেতে চায়। তাই তিনি শুধু পুরুষদের যেতে দিতে চাইলেন।
১১ "না! শুধুমাত্র পুরুষেরা গিয়ে ঈশ্বর প্রার্থনা করুক, কারণ সেটাই তোমরা চেয়েছ।" এরপর তিনি মোশি বা মূসা ও আরেন বা হারুনকে তার কাছ থেকে বের করে দিলেন।
ফারাও বা ফেরাউন ইস্রায়েলীয়দের স্বাধীনতা পুরোপুরি স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না। তাই তিনি কৌশল করে শুধু পুরুষদের যেতে দিতে চাইলেন।
১২ ”তখন ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন, "তোমার হাত মিশরের ওপর প্রসারিত কর, যাতে পঙ্গপাল এসে দেশ ছেয়ে ফেলে এবং যা কিছু শিলাবৃষ্টিতে অবশিষ্ট ছিল, তা ধ্বংস করে।"
ফারাও বা ফেরাউনের অবাধ্যতার কারণে ঈশ্বর ভয়ংকর পঙ্গপালের মহামারী পাঠালেন।
১৩ “মোশি বা মূসা তাঁর লাঠি মিশরের উপর স্পর্শ করলেন, আর ঈশ্বর পূর্ব দিক থেকে বাতাস বইয়ে দিলেন। সেই বাতাস পুরো একদিন এবং রাত বয়ে চলল, আর সকালে পঙ্গপাল এসে হাজির হল।
ঈশ্বর তাঁর শক্তির দ্বারা প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ন্ত্রণ করলেন এবং পঙ্গপালের ঝাঁক পাঠালেন।
১৪ “পঙ্গপালের দল সমস্ত মিশরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। আগে কখনও এত বিশাল পঙ্গপালের মহামারী হয়নি, আর ভবিষ্যতেও হবে না।
এটি ছিল মিশরের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর পঙ্গপালের আক্রমণ।
১৫ “পঙ্গপাল পুরো মাটি ঢেকে ফেলল, যাতে মাটি দেখা না যায়। তারা গাছের সবুজ পাতা ও মাঠের ফসল সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলল। মিশরে কোনো গাছ বা উদ্ভিদের একটিও সবুজ অংশ অবশিষ্ট থাকল না।
শিলাবৃষ্টির পর যা কিছু টিকে ছিল, পঙ্গপালের আক্রমণে তাও ধ্বংস হয়ে গেল।
১৬ “ফারাও বা ফেরাউন দ্রুত মোশি বা মূসা ও আরেন বা হারুনকে ডেকে বললেন, "আমি তোমাদের ঈশ্বর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এবং তোমাদের বিরুদ্ধেও পাপ করেছি।"
ফারাও বা ফেরাউন বিপদের সময় অনুতপ্ত হলেন, কিন্তু এটি ছিল শুধুমাত্র সাময়িক অনুশোচনা।
১৭ "এবার অন্তত এই একবার আমার পাপ ক্ষমা করো এবং তোমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো, যেন তিনি এই মরণঘাতী দুর্যোগ আমার কাছ থেকে সরিয়ে নেন।"
ফারাও বা ফেরাউন শুধু নিজের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত ছিলেন না।
১৮ “মোশি বা মূসা ফারাও বা ফেরাউনের কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন।”
মোশি বা মূসা আবারও ঈশ্বরের দয়া প্রার্থনা করলেন, যদিও তিনি জানতেন যে ফারাও বা ফেরাউন পরে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবেন।
১৯ “ঈশ্বরের এক শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাস বইয়ে দিলেন, যা সমস্ত পঙ্গপালকে লাল সাগরে ফেলে দিল। মিশরের কোথাও একটি পঙ্গপালও অবশিষ্ট রইল না।”
ঈশ্বরের হস্তক্ষেপে মিশর পঙ্গপালের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেল, কিন্তু ফারাও বা ফেরাউনের হৃদয় এখনও কঠিন রয়ে গেল।
২০ “কিন্তু ঈশ্বরের ফারাও বা ফেরাউনের হৃদয় কঠোর করলেন, এবং সে ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিল না।”
ফারাও বা ফেরাউন আবারও ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করলেন, যা আরও ভয়ংকর শাস্তির দিকে নিয়ে গেল।
অন্ধকারের মহামারী
২১ “ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন, "তোমার হাত আকাশের দিকে প্রসারিত কর, যাতে মিশরে এমন অন্ধকার নেমে আসে, যা অনুভব করা যায়।"
এটি ছিল একটি অলৌকিক অন্ধকার, যা শুধুমাত্র মিশরীয়দের উপর এসেছিল।
২২ “মোশি বা মূসা তাঁর হাত আকাশের দিকে তুললেন, এবং তিন দিন ধরে মিশরে ঘন অন্ধকার নেমে এল।”
তিন দিন ধরে এমন অন্ধকার ছিল যে কেউ কোথাও যেতে পারছিল না।
২৩ "তিন দিন ধরে কেউ কাউকে দেখতে পেল না বা নড়াচড়া করতে পারল না। কিন্তু যেখানে ইস্রায়েলীয়রা বাস করছিল, সেখানে আলো ছিল।
ঈশ্বর আবারও ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন, দেখালেন যে তিনি তাঁর জাতির জন্য আলাদা পরিকল্পনা রেখেছেন।
২৪ “ফারাও বা ফেরাউন আবার মোশি বা মূসাকে ডেকে বললেন, "তোমরা সবাই যেতে পারো, এমনকি তোমাদের শিশুদেরও নিয়ে যেতে পারো। শুধু তোমাদের পশুগুলো এখানে রেখে যেতে হবে।"
ফারাও বা ফেরাউন কিছুটা ছাড় দিলেও পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেননি।
২৫ “মোশি বা মূসা বললেন, "না! আমাদের পশুগুলোও সঙ্গে নিতে হবে, কারণ আমরা ঈশ্বরের জন্য বলিদান করব।"
ইস্রায়েলীয়দের মুক্তি সম্পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন ছিল, তাই তারা কিছুই রেখে যেতে পারেনি।
২৬ "আমরা একটি পশুও রেখে যেতে পারি না, কারণ আমরা জানি না কোন পশু ঈশ্বরের জন্য বলিদান করতে হবে, যতক্ষণ না আমরা সেখানে পৌঁছাই।"
ঈশ্বরের প্রার্থনার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা সবই সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
২৭ “কিন্তু ঈশ্বর ফারাও বা ফেরাউনের হৃদয় কঠোর করলেন, এবং সে তাদের যেতে দিল না।”
ফারাও বা ফেরাউন আবারও ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করলেন, যা চূড়ান্ত শাস্তির দিকে নিয়ে গেল।
২৮ ”ফারাও বা ফেরাউন মোশি বা মূসাকে বললেন, "আমার সামনে থেকে চলে যাও! যদি তুমি আবার আমার সামনে আসো, তাহলে তোমাকে হত্যা করা হবে!"
ফারাও বা ফেরাউন তাঁর জেদ ধরে রেখে মোশি বা মূসাকে হুমকি দিলেন।
২৯ “মোশি বা মূসা বললেন, "ঠিকই বলেছ, আমি আর কখনো তোমার সামনে আসব না।"
এটি ছিল ফারাও বা ফেরাউন ও মোশি বা মূসার শেষ সাক্ষাৎ। এরপর ঈশ্বর চূড়ান্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন।