This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
পশুর উপর মহামারী
১ “তারপর ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন, “ফারাও বা ফেরাঊনের কাছে গিয়ে তাকে বলো, ‘ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর, সদা ঈশ্বর এ কথা বলেন— “আমার লোকদের ছেড়ে দাও, যাতে তারা আমার প্রার্থনা করতে পারে।”
এখানে ঈশ্বর সরাসরি ফারাও বা ফেরাঊনের কাছে একটি আদেশ পাঠাচ্ছেন। তিনি চান ইস্রায়েলীয়রা মুক্ত হয়ে তাঁকে নির্ভয়ে তাঁর প্রার্থনা করুক। কিন্তু ফারাও বা ফেরাউন নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছিল এবং ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করছিল।
২ “যদি তুমি তাদের যেতে না দাও এবং তাদের আটকে রাখো,”
ঈশ্বর স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন যে, যদি ফারাও বা ফেরাউন অবাধ্য থাকে এবং ইস্রায়েলীয়দের দাসত্বে বন্দী রাখে, তবে তিনি কঠোর শাস্তি দেবেন।
৩ “তাহলে সদা ঈশ্বরের শক্তি তোমার পশুর ওপর মহামারী আনবে—তোমার মাঠের ঘোড়া, গাধা, উট, গরু, ভেড়া ও ছাগলের উপর এক ভয়ংকর রোগ ছড়িয়ে পড়বে।”
ঈশ্বর ঘোষণা করেন যে, মিশরের সব গৃহপালিত পশুর মধ্যে ভয়ংকর মহামারী ছড়িয়ে পড়বে। এটি ছিল একটি বড় আঘাত, কারণ পশুগুলো কৃষিকাজ, পরিবহন ও খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল।
৪ “কিন্তু ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের পশুদের আলাদা করে রাখবেন, যাতে তাদের কোনো পশু মারা না যায়।”
এখানে ঈশ্বর দেখাচ্ছেন যে, তিনি তাঁর জাতির সুরক্ষা দেন। ইস্রায়েলীয়দের পশুদের কিছুই হবে না, কিন্তু মিশরীয়দের পশুদের উপর মহামারী আসবে।
৫ “ঈশ্বর সময় নির্ধারণ করে বললেন, ‘আগামীকাল আমি এই কাজ করবো।”
ঈশ্বর নির্দিষ্ট সময় দিয়ে জানিয়ে দেন যে, তিনি কখন এই শাস্তি আনবেন। এতে বোঝা যায় যে, এটি কোনো স্বাভাবিক দুর্যোগ নয়, বরং ঈশ্বরের পরিকল্পিত।
৬ “এবং পরের দিন ঈশ্বর তাই করলেন। মিশরের সব পশু মারা গেল, কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের একটি পশুও মারা গেল না।”
ঈশ্বরের কথা বাস্তবায়িত হয়। মিশরের সমস্ত গৃহপালিত পশু মারা যায়, কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের পশুরা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। এটি ঈশ্বরের শক্তি ও তাঁর জাতির প্রতি সুরক্ষার প্রমাণ।
৭ “ফারাও বা ফেরাউন খোঁজ নিয়ে দেখলেন, ইস্রায়েলীয়দের একটি পশুও মারা যায়নি। তবুও তার মন কঠিন রইলো এবং সে ইসরায়েলী লোকদের যেতে দিল না।”
ফারাও বা ফেরাউনের অহংকার ও জেদ এখানেও দেখা যায়। এমনকি যখন সে দেখলো ঈশ্বরের শক্তি বাস্তব, তবুও সে তাঁর কথা মানতে রাজি হলো না।
ফোঁড়ার মহামারী
৮ “তারপর ঈশ্বর মোশি বা মূসা ও আরেন বা হারুনকে বললেন, ‘চুল্লির ছাই হাতে নাও, এবং মোশি বা মূসা ফারাও বা ফেরাঊনের সামনে দাঁড়িয়ে সেটি আকাশে ছুঁড়ে ফেলবে।”
এবার ঈশ্বর নতুন শাস্তি নিয়ে আসেন। মোশি বা মূসাকে আদেশ দেন চুল্লির ছাই আকাশে ছুঁড়ে দিতে, যা পরে মিশরজুড়ে মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে।
৯ “এটি মিশরের সর্বত্র সূক্ষ্ম ধূলায় পরিণত হবে এবং মানুষ ও পশুর গায়ে ফোঁড়ার দগদগে ঘা সৃষ্টি করবে।”
এই মহামারী শুধু পশুদের উপর নয় বরং মানুষদের উপর আঘাত করে। তাদের শরীরে ফোঁড়া ওঠে। এটি ছিল ঈশ্বরের কঠোর শাস্তির আরেকটি ধাপ।
১০ “তারা চুল্লির ছাই নিল এবং ফারাও বা ফেরাউনের সামনে দাঁড়িয়ে মোশি বা মূসা তা আকাশে ছুঁড়ে দিলেন, আর তা মিশরের সমস্ত লোক ও পশুর গায়ে ফোঁড়ার সৃষ্টি করলো।”
মোশি বা মূসা ঈশ্বরের আদেশ পালন করেন, এবং সাথে সাথেই মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। মিশরের লোকেরা শারীরিক কষ্টে ভুগতে থাকে।
১১ “জাদুকররা মোশি বা মূসার সামনে দাঁড়াতে পারলো না, কারণ ফোঁড়া তাদের গায়েও উঠেছিল এবং তাদের কষ্ট হচ্ছিল।”
মিশরের জাদুকররা যারা আগে মোশি বা মূসার বিরুদ্ধে দাঁড়াতো, তারাও এবার দুর্বল হয়ে পড়লো। এটি প্রমাণ করলো যে, ঈশ্বরের শক্তি মানুষের যে কোনো জাদুর চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
১২ “কিন্তু ঈশ্বর ফারাও বা ফেরাউনের মন কঠিন করলেন, এবং সে মোশি বা মূসার কথা শুনলো না, ঠিক যেমন ঈশ্বর পূর্বেই বলেছিলেন।”
ফারাও বা ফেরাউনের মন কঠিন রয়ে গেল। সে ঈশ্বরের শক্তি দেখেও নিজেকে পরিবর্তন করলো না।
শিলাবৃষ্টির মহামারী
১৩ “ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন, ‘সকালে উঠে ফারাও বা ফেরাউনের সামনে দাঁড়াও এবং বলো, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদা ঈশ্বর বলেন: আমার লোকদের ছেড়ে দাও যাতে তারা আমার প্রার্থনা করতে পারে।”
ঈশ্বর আবারও ফারাও বা ফেরাউনের সামনে মোশি বা মূসাকে পাঠান, কারণ ফারাও বা ফেরাউন এখনো তাঁর আদেশ মানতে রাজি হয়নি।
১৪ “এইবার আমি আমার সমস্ত শক্তি তোমার ও তোমার প্রজাদের ওপর প্রয়োগ করবো, যাতে তুমি বুঝতে পারো যে পৃথিবীতে আমার মতো কেউ নেই।”
ঈশ্বর ঘোষণা করেন যে, এবার তাঁর শাস্তি আরও ভয়াবহ হবে, যাতে ফারাও বা ফেরাউন বুঝতে পারে যে, ঈশ্বরের শক্তি অপার ও অসীম।
১৫ "আমি ইচ্ছা করলে আমার হাত বাড়িয়ে এমন মহামারী আনতে পারতাম, যা তোমাকে ও তোমার প্রজাদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিত।"
ঈশ্বর ফারাও বা ফেরাউনকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন যে, তিনি চাইলে সম্পূর্ণ মিশর ধ্বংস করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ধাপে ধাপে শাস্তি দিচ্ছেন, যাতে ফারাও বা ফেরাউন ঈশ্বরের শক্তি ও মহিমা উপলব্ধি করতে পারে।
১৬ "কিন্তু আমি তোমাকে এইজন্য রেখেছি, যাতে আমার শক্তি তোমার মধ্যে প্রকাশ পায় এবং আমার নাম সমগ্র পৃথিবীতে প্রচারিত হয়।"
ঈশ্বর ফারাও বা ফেরাউনকে ধ্বংস করেননি, বরং তাকে জীবিত রেখেছেন, যাতে তিনি এবং পুরো পৃথিবী ঈশ্বরের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে। এটি ঈশ্বরের মহত্ত্ব এবং তাঁর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে।
১৭"তবুও তুমি আমার লোকদের অবহেলা করছো এবং তাদের যেতে দিচ্ছো না।"
ফারাও বা ফেরাউন এখনও ঈশ্বরের আদেশ মানতে রাজি হয়নি এবং ইস্রায়েলীয়দের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
১৮ "তাই আগামীকাল আমি এমন ভয়ংকর শিলাবৃষ্টি পাঠাবো, যা মিশরের ইতিহাসে কখনো হয়নি, যেদিন এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত।"
ঈশ্বর ফারাও বা ফেরাউনকে শেষবারের মতো সতর্ক করছেন এবং জানিয়ে দিচ্ছেন যে, এই শাস্তি হবে মিশরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
১৯ "তুমি এখনই আদেশ দাও, যেন তোমার পশু ও দাসেরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়, কারণ শিলাবৃষ্টি যাদের ওপরে পড়বে, তারা সবাই মারা যাবে।"
এখানে ঈশ্বর দয়া দেখিয়েছেন এবং সুযোগ দিয়েছেন, যাতে যারা তাঁর কথা মানে, তারা নিজেদের ও তাদের সম্পদ রক্ষা করতে পারে।
২০ "ফারাও বা ফেরাউনের যে আধিকারিরা ঈশ্বরের কথায় ভয় পেল, তারা দ্রুত নিজেদের দাস ও পশুদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল।"
কিছু মিশরীয় আধিকারিরা ঈশ্বরের শক্তি স্বীকার করেছিল এবং তাঁর সতর্কবার্তা শুনে নিজেদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করেছিল।
২১ "কিন্তু যারা ঈশ্বরের কথা অবজ্ঞা করলো, তারা তাদের দাস ও পশুদের বাইরে ফেলে রাখলো।"
যারা ঈশ্বরের সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিল না, তারা ভয়াবহ পরিণতির শিকার হলো। এটি দেখায় যে, অবাধ্যতা কীভাবে ধ্বংস ডেকে আনে।
২২ "তারপর ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন, ‘তোমার হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করো, তাহলে শিলাবৃষ্টি হবে এবং মিশরের সমস্ত জমিতে পড়বে—মানুষের উপর, পশুর উপর এবং জমির সব গাছপালার উপর।"
এবার ঈশ্বরের আদেশ অনুযায়ী, মোশি বা মূসা তাঁর হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করলে শিলাবৃষ্টি শুরু হবে।
২৩ "মোশি বা মূসা তার লাঠি আকাশের দিকে তুললেন, এবং ঈশ্বর বজ্রধ্বনি ও শিলাবৃষ্টি পাঠালেন। বিদ্যুৎ মাটিতে আঘাত করলো এবং ঈশ্বর মিশরের উপর শিলাবৃষ্টি নামালেন।"
ঈশ্বরের আদেশ মতই দুর্যোগ শুরু হয়। বজ্রপাত, বিদ্যুৎ এবং শিলাবৃষ্টি মিশরকে ধ্বংস করতে শুরু করে।
২৪ "শিলাবৃষ্টি ও বিদ্যুতের ঝলকানি ছিল এতটাই ভয়ংকর যে, মিশরের ইতিহাসে এমন ঝড় আগে কখনো হয়নি।"
ঈশ্বরের শাস্তি ছিল অতুলনীয় এবং এটি পুরো মিশরকে ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে ফেলে দেয়।
২৫ "শিলাবৃষ্টি মিশরের সকল ক্ষেতের ফসল, পশু, গাছপালা ও মানুষকে বিধ্বস্ত করলো।"
শিলাবৃষ্টির আঘাতে মানুষ, পশু ও গাছপালা কিছুই রক্ষা পেল না। এটি ছিল একটি সর্বাত্মক ধ্বংস।
২৬ "কিন্তু যেখানে ইস্রায়েলীয়রা থাকত, সেই গোশেন এলাকায় কোনো শিলাবৃষ্টি হয়নি।"
ঈশ্বর তাঁর নিজস্ব জাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। এটি দেখায় যে, যারা ঈশ্বরের অনুগত, তারা তাঁর করুণা পায়।
২৭ "তখন ফারাও বা ফেরাউন মোশি বা মূসা ও আরেন বা হারুনকে ডেকে বললো, ‘এইবার আমি ভুল করেছি। ঈশ্বর ঠিক, আর আমি এবং আমার লোকেরা অন্যায় করেছি।"
ফারাও বা ফেরাউন প্রথমবারের মতো স্বীকার করলো যে, সে ভুল করেছে। তবে এটি প্রকৃত অনুশোচনা ছিল না, বরং পরিস্থিতি সামলানোর একটি কৌশল ছিল।
২৮ "ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো, যেন এই বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি বন্ধ হয়। আমি তোমাদের যেতে দেব, তোমরা আর এখানে থাকবে না।"
ফারাও বা ফেরাউন প্রতিশ্রুতি দিল যে, যদি দুর্যোগ থামে, তবে সে ইস্রায়েলীয়দের মুক্তি দেবে। কিন্তু এটি ছিল একটি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি।
২৯ "মোশি বা মূসা বললেন, ‘আমি শহরের বাইরে গিয়ে ঈশ্বরের কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করবো। তখন বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি থেমে যাবে, যাতে তুমি জানতে পারো যে, পৃথিবী ঈশ্বরেরই।"
মোশি বা মূসা ফারাও বা ফেরাউনকে জানালেন যে, শাস্তি বন্ধ হবে, তবে তাকে বুঝতে হবে যে, ঈশ্বরই সর্বশক্তিমান।
৩০ "কিন্তু আমি জানি, তুমি ও তোমার লোকরা এখনও ঈশ্বরকে ভয় পাও না।"
মোশি বা মূসা বুঝতে পারলেন যে, ফারাও বা ফেরাউনের অনুশোচনা আসল নয়, বরং সাময়িক ভয় থেকে এসেছে।
৩১ "ততক্ষণে শিলাবৃষ্টি শস্যের ক্ষতি করেছিল, কারণ বার্লি ও ফ্ল্যাক্স গাছপালা বেড়ে উঠেছিল।"
এই দুর্যোগ শস্য উৎপাদনের বড় ক্ষতি করেছিল।
৩২ "তবে গম ও স্পেল্ট শস্য নষ্ট হয়নি, কারণ সেগুলো পরে বেড়ে ওঠে।"
কিছু শস্য এখনো বেঁচে ছিল, কারণ সেগুলো দেরিতে বৃদ্ধি পায়।
৩৩ "মোশি বা মূসা যখন শহর থেকে বের হয়ে ঈশ্বরের কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করলেন, তখন বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি থেমে গেল।"
ঈশ্বর মোশি বা মূসার প্রার্থনা শুনলেন এবং দুর্যোগ বন্ধ করলেন।
৩৪ "কিন্তু ফারাও বা ফেরাউন দেখলো যে, ঝড় থেমে গেছে, তখন সে আবার পাপ করলো এবং তার হৃদয় কঠিন রইলো।"
ফারাও বা ফেরাউন আবার ঈশ্বরের কথা অবহেলা করলো এবং তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলো।
৩৫ "ফারাও বা ফেরাউনের মন কঠিন রইলো, এবং সে ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিল না, যেমন ঈশ্বর আগে বলেছিলেন।"
ফারাও বা ফেরাউন নিজের অবস্থান পরিবর্তন করলো না, বরং আরও কঠোর হলো।