This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
১ "তখন ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন,"
২ “ইস্রায়েলীয়দের বল, তারা ফিরে এসে পি হাহিরোতের কাছে শিবির করুক, যা মিগদোল ও সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত। তারা সমুদ্রের কাছে, বাল জেফোনের বিপরীতে শিবির করবে।"
৩ "ফারাও ভাববে, ‘ইস্রায়েলীয়রা পথ হারিয়ে মরুভূমিতে আটকে পড়েছে।"
৪ "আমি ফারাওয়ের মন কঠোর করব, এবং সে তাদের তাড়া করবে। কিন্তু আমি ফারাও ও তার সমগ্র সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আমার গৌরব প্রকাশ করব, এবং মিশরীয়রা জানবে যে আমি ঈশ্বর।"
এই অধ্যায়ের শুরুতেই ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের একটি নির্দিষ্ট স্থানে শিবির করার নির্দেশ দেন। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ফারাও বা ফেরাউনকে প্রলুব্ধ করা হয় যাতে সে মনে করে ইস্রায়েলীয়রা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবে ফারাও বা ফেরাঊনের মন কঠোর করেন, কারণ তিনি তাঁর শক্তি ও মহিমা প্রকাশ করতে চান। এভাবে ঈশ্বর দেখাতে চান যে তিনি সর্বশক্তিমান এবং তাঁর পরিকল্পনা অবধারিত।
৫“ইস্রায়েলীয়রা তাই করল।”
ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের আদেশ পালন করল, যদিও তারা জানত না কী হতে চলেছে। এটি তাদের বিশ্বাসের একটি পরীক্ষা ছিল।
৬“যখন মিশরের রাজাকে বলা হলো যে ইস্রায়েলীয়রা পালিয়ে গেছে, তখন ফারাও ও তার আধিকারিরা তাদের সম্পর্কে চিন্তা পরিবর্তন করল এবং বলল, ‘আমরা এটা কী করলাম? আমরা ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিলাম, এবং তাদের শ্রম হারালাম!”
ফারাও বা ফেরাউন ও তার আধিকারিরা উপলব্ধি করল যে তারা ইস্রায়েলীয়দের মুক্তি দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে, কারণ ইস্রায়েলীয়রা তাদের ক্রীতদাস ছিল। ফলে তারা তাদের ফেরত আনার সিদ্ধান্ত নিল।
৭ “তাই সে (ফারাও) তার রথ প্রস্তুত করল এবং তার সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিল।”
ফারাও বা ফেরাউন দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাল এবং তার সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করল। এটি তার জেদের প্রতিফলন যা তাকে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিল।
৮ “ ঈশ্বর ফারাও,মিশরের রাজাকে কঠোর করলেন, ফলে সে ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করল, যারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যাত্রা করছিল।”
ঈশ্বর ফারাও বা ফেরাঊনের মন কঠোর করলেন যাতে সে ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে। অন্যদিকে, ইস্রায়েলীয়রা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিল, কারণ তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও সুরক্ষার অধীনে ছিল।
৯ “মিশরীয়রা— ফারাও এর সব ঘোড়া, রথ, অশ্বারোহী এবং সৈন্য—তাদের তাড়া করল এবং সমুদ্রের কাছে পি হাহিরোথের শিবিরে গিয়ে তাদের ধরে ফেলল, যা বাল জেফোনের বিপরীতে ছিল।”
মিশরীয় সেনাবাহিনী শক্তিশালী ও সুসজ্জিত ছিল। তারা ইস্রায়েলীয়দের ঘিরে ফেলল, এবং মানুষের চোখে, এটি ছিল এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি।
১০ “যখন ফারাও কাছাকাছি এল, তখন ইস্রায়েলীয়রা উপরে তাকিয়ে দেখল যে মিশরীয়রা তাদের ধাওয়া করছে। তারা খুব ভয় পেয়ে ঈশ্বরের কাছে চিৎকার করে কাঁদল।”
ইস্রায়েলীয়রা তাদের শত্রুদের দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। যদিও ঈশ্বর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, ভয় এবং সংশয় তাদের মধ্যে প্রবল হয়ে উঠল।
১১ “তারা মোশি বা মূসাকে বলল, ‘মিশরে কি কবরের অভাব ছিল যে তুমি আমাদের মরুভূমিতে এনে মরতে বাধ্য করলে? আমাদের মিশর থেকে বের করে এনে তুমি আমাদের কী করেছ?’”
ভয় ও হতাশার কারণে ইস্রায়েলীয়রা মোশি বা মূসার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে লাগল। তারা ভুলে গিয়েছিল যে ঈশ্বর তাদের মুক্ত করেছেন এবং তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছেন।
১২ “আমরা কি তোমাকে মিশরে বলিনি, ‘আমাদের ছেড়ে দাও, আমরা মিশরীয়দের সেবা করব’? কারণ আমাদের জন্য মিশরীয়দের দাসত্ব করাই মরুভূমিতে মারা যাওয়ার চেয়ে ভালো হতো।”
যখনই মানুষ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তারা প্রায়শই অতীতের দুঃখকে নিরাপদ বলে মনে করে। ইস্রায়েলীয়রা দাসত্বের জীবনকে নিরাপদ বলে মনে করছিল, কারণ তারা ঈশ্বরের পরিকল্পনার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে পারছিল না।
১৩ “তখন মোশি বা মূসা লোকদের বললেন, ‘ভয় পেয়ো না। স্থির থাকো এবং দেখো, আজ ঈশ্বর তোমাদের কীভাবে উদ্ধার করবেন। আজকের পরে তোমরা মিশরীয়দের আর কখনো দেখতে পাবে না।”
মূসা তাদের সাহস দিলেন এবং ঈশ্বরের উপর আস্থা রাখতে বললেন। তিনি ঘোষণা করলেন যে ঈশ্বরই তাদের জন্য যুদ্ধ করবেন এবং তাদের শত্রুদের ধ্বংস করবেন।
১৪ “ঈশ্বর তোমাদের জন্য লড়াই করবেন; তোমাদের শুধু স্থির থাকতে হবে।”
এই আয়াতটি বিশ্বাসের শক্তির উপর ভিত্তি করে। ঈশ্বর বলছেন যে তিনি তার জনগণের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করবেন এবং তাদের জয় এনে দেবেন, শুধুমাত্র ধৈর্য ও বিশ্বাস ধরে রাখার প্রয়োজন।
১৫ “তখন ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন, ‘তুমি কেন আমার কাছে প্রার্থনা করছ? ইস্রায়েলীয়দের বল, তারা যেন এগিয়ে যায়।”
ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন যে এখন আর প্রার্থনার সময় নয়, বরং পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। ঈশ্বর মানুষের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কাজ করেন।
১৬ “তোমার লাঠি তুলে ধরো এবং তোমার হাত সমুদ্রের উপর প্রসারিত করো যাতে জল বিভক্ত হয়, আর ইস্রায়েলীয়রা শুষ্ক ভূমির উপর দিয়ে সমুদ্র পার হতে পারে।”
ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে একটি অলৌকিক কাজের জন্য প্রস্তুত করলেন। এটি দেখায় যে ঈশ্বর প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে তার ইচ্ছামতো পরিচালিত করতে পারেন।
১৭ “আমি মিশরীয়দের মন কঠোর করব, যাতে তারা তাদের (ইস্রায়েলীয়দের) পেছনে ধাওয়া করে। আমি ফারাও বা ফেরাউন ও তার সমস্ত বাহিনীর ওপর, তার রথ ও অশ্বারোহীদের ওপর আমার গৌরব প্রকাশ করব।”
ঈশ্বর মিশরীয়দের ভুল পথে চালিত করলেন যাতে তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যায়, আর এতে ঈশ্বরের শক্তি প্রকাশ পায়।
১৮ “মিশরীয়রা জানবে যে আমি ঈশ্বর, যখন আমি ফারাও বা ফেরাঊনের, তার রথ এবং তার অশ্বারোহীদের উপর আমার গৌরব প্রকাশ করব।”
ঈশ্বরের শক্তি এতটাই মহিমান্বিত হবে যে এমনকি তার শত্রুরাও স্বীকার করবে যে তিনিই একমাত্র সত্য ঈশ্বর।
১৯ “তখন ঈশ্বরের দূত, যিনি ইস্রায়েলীয়দের বাহিনীর সামনে চলছিলেন, সরে গিয়ে তাদের পেছনে গেলেন। মেঘের স্তম্ভও সামনে থেকে সরল এবং তাদের পেছনে অবস্থান করল।”
ঈশ্বরের দূত এবং মেঘের স্তম্ভ ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করার জন্য অবস্থান পরিবর্তন করল, যা ঈশ্বরের উপস্থিতি ও সুরক্ষার চিহ্ন।
২০“এটি মিশরীয়দের বাহিনীর সঙ্গে ইস্রায়েলীয়দের বাহিনীর মাঝখানে এল। রাতে এটি একদিকে অন্ধকার এবং অন্যদিকে আলো নিয়ে এল, ফলে তারা সারা রাত পরস্পরের কাছে যেতে পারল না।”
ঈশ্বর অলৌকিকভাবে তার জনগণকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করলেন। মেঘের স্তম্ভের একপাশে অন্ধকার ও অন্যপাশে আলো সৃষ্টি করে তিনি ইস্রায়েলীয়দের পালানোর সুযোগ দিলেন।
২১“তারপর মোশি বা মূসা তার হাত সমুদ্রের উপর প্রসারিত করলেন, আর ঈশ্বর সারা রাত শক্তিশালী পূর্বা- বাতাস বইয়ে দিলেন এবং সমুদ্রকে শুকিয়ে দিলেন; জল দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল।”
এটি ঈশ্বরের অলৌকিক শক্তির অন্যতম বৃহৎ প্রকাশ। ঈশ্বর প্রাকৃতিক শক্তিকে ব্যবহার করে সমুদ্রকে দুই ভাগ করলেন, যাতে ইস্রায়েলীয়রা শুষ্ক জমির উপর দিয়ে হাঁটতে পারে।
২২ “আর ইস্রায়েলীয়রা সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে শুকনো জমির উপর দিয়ে গেল, আর জল তাদের ডান ও বাম দিকে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল।”
এটি দেখায় যে ঈশ্বর তার জনগণের জন্য একটি অসম্ভব পথ তৈরি করতে পারেন। জল একদিকে ও অন্যদিকে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে থাকল, যা সম্পূর্ণ অলৌকিক ঘটনা।
২৩ “মিশরীয়রা তাদের তাড়া করল, আর ফারাও বা ফেরাঊনের সব ঘোড়া, রথ ও অশ্বারোহী তাদের পেছনে সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করল।”
যদিও ঈশ্বর স্পষ্টভাবে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করছিলেন, তবু মিশরীয়রা তাদের দমন করার জন্য তাদের অহংকারের কারণে ঝুঁকি নিল।
২৪ “রাতের শেষ প্রহরে ঈশ্বর অগ্নি ও মেঘের স্তম্ভ থেকে মিশরীয় সেনাবাহিনীর দিকে তাকাল এবং তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেন।”
ঈশ্বর সরাসরি শত্রুদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করলেন এবং তাদের পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করলেন। এতে বোঝা যায় যে ঈশ্বর তার জনগণের জন্য যুদ্ধ করেন।
২৫ “তিনি তাদের রথের চাকা খুলে দিলেন যাতে তাদের এগোতে অসুবিধা হয়। তখন মিশরীয়রা বলল, ‘আসো, ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে পালিয়ে যাই! কারণ ঈশ্বর তাদের জন্য মিশরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।”
মিশরীয়রা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করল যে তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
২৬ “তারপর ঈশ্বর মোশি বা মূসাকে বললেন, ‘তোমার হাত সমুদ্রের উপর প্রসারিত করো, যাতে জল মিশরীয়দের, তাদের রথ ও অশ্বারোহীদের উপর ফিরে আসে।”
ঈশ্বরের পরিকল্পনা পূর্ণতা পেতে চলেছিল। মিশরীয়দের জন্য পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ইস্রায়েলীয়রা সম্পূর্ণ মুক্তি পাবে।
২৭ “তখন মোশি বা মূসা তার হাত সমুদ্রের উপর প্রসারিত করলেন, আর দিনের আলো ফুটতেই সমুদ্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। মিশরীয়রা জলের বিপরীতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু ঈশ্বর তাদের সমুদ্রের মধ্যে ফেলে দিলেন।”
যারা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়, তারা শেষ পর্যন্ত তার ন্যায়বিচারের সম্মুখীন হয়। মিশরীয়দের পরাজয় ছিল তাদের অহংকার ও অবিশ্বাসের পরিণাম।
২৮ “জল ফিরে এসে রথ, অশ্বারোহী ও ফারাও বা ফেরাঊনের পুরো সেনাবাহিনীকে ঢেকে দিল—যারা ইস্রায়েলীয়দের পেছনে সমুদ্রে প্রবেশ করেছিল। তাদের মধ্যে একজনও বেঁচে থাকল না।”
মিশরীয়দের সম্পূর্ণ পরাজয় ঈশ্বরের শক্তির পরিপূর্ণ প্রকাশ। তিনি শুধু তার জনগণকে রক্ষা করেননি, বরং তাদের শত্রুদের ধ্বংসও করেছেন।
২৯ “কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা সমুদ্রের মধ্য দিয়ে শুকনো জমির উপর দিয়ে হেঁটে গেল, আর জল তাদের ডান ও বাম দিকে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল।”
এটি দেখায় যে ঈশ্বর তার জনগণকে এক অলৌকিক পথে পথ দেখালেন, যেখানে তাদের শত্রুরা ধ্বংস হয়ে গেল।
৩০ “সেই দিন ঈশ্বর ইস্রায়েলকে মিশরীয়দের হাত থেকে রক্ষা করলেন, আর ইস্রায়েলীয়রা সমুদ্রতটে মিশরীয়দের মৃতদেহ দেখতে পেল।”
এই ঘটনা ইস্রায়েলীয়দের জন্য চিরস্থায়ী শিক্ষা হয়ে থাকল যে ঈশ্বরই তাদের একমাত্র রক্ষাকর্তা।
৩১“আর যখন ইস্রায়েলীয়রা দেখল যে ঈশ্বর মিশরীয়দের বিরুদ্ধে কত মহান শক্তি প্রকাশ করেছেন, তখন তারা ঈশ্বরকে ভয় করল ও তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল, এবং মোশি বা মূসাকেও তার দাস হিসেবে গ্রহণ করল।”
এই অলৌকিক মুক্তির পর ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের ক্ষমতা উপলব্ধি করল এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। এটি দেখায় যে ঈশ্বরের কর্ম দেখলে মানুষের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়।