This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
নির্বাসন ১: ইসরায়েলিদের নিপীড়নের কাহিনি
নির্বাসনের এই অধ্যায়টি মানব ইতিহাসের একটি গভীর এবং হৃদয়বিদারক অধ্যায়কে তুলে ধরে। মিশরের ফারাও বা ফেরাউন (নামে পরিচিত) এবং ইসরায়েলিদের মধ্যকার এক সংঘর্ষ কেবল নিপীড়নের ইতিহাসই নয় বরং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও মানবতার একটি অসাধারণ উদাহরণ।
মানব ইতিহাসে দাসত্ব এবং অত্যাচারের অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যায়, তবে এর মধ্যে ইসরায়েলিদের উপর মিশরের ফারাওয়ের ফেরাওনের (নামে পরিচিত) নিপীড়নের ঘটনাটি অন্যতম। এই ঘটনাটি কেবলমাত্র একটি জনগোষ্ঠীর উপর হওয়া নির্যাতনের কাহিনী নয়; বরং এটি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, আনুগত্য, ন্যায়বোধ, এবং সাহসিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
ঘটনার শুরুটা হয় যেভাবে, ইস্রায়েলের মানুষরা প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে ইয়াকুবের সঙ্গে মিশরে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে যারা ছিলেন তাদের নাম ছিল ইষাখর, জেবুলুন, বেনজামিন, ডান, নপ্তালি, গাদ ও আশের। ইয়াকুবের বংশধরদের মোট সংখ্যা ছিল সত্তর জন, আর জোসেফ এর আগেই মিশরে অবস্থান করছিলেন।
কিছু সময় পর, জোসেফ আর তার সব ভাইসহ ঐ প্রজন্মের সবাই মৃত্যুবরণ করলেও ইস্রায়েলীয়রা সংখ্যা ও শক্তিতে বেড়ে উঠল। তাদের সংখ্যা এত বেশি হয়ে গেল যে পুরো দেশে তারা ছড়িয়ে পড়ল।
এমন সময় মিশরে একজন নতুন রাজা হিসেবে ফারাও বা ফেরাউন (নামে পরিচিত) ক্ষমতায় আসেন, যিনি জোসেফ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না এবং তাঁকে কোনো গুরুত্ব বা সম্মান দিতেন না। তিনি তার জনগণকে বললেন, ইসরায়েলিদের প্রতি কঠোর হতে। তার নির্দেশে ইসরায়েলিদের উপর জোড়পূর্বক কঠোর শ্রম এবং নির্মম আচরণ করা শুরু হলো। এমনকি নতুন রাজার আদেশে নবজাতক ছেলেদের নীল নদে ফেলে হত্যা করা শুরু হলো। কিন্তু ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন এবং ইসরায়েলিদের অদম্য মনোবল ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য তাদের দমন করতে দেয়নি।
ইসরায়েলিরা মিশরে সংখ্যায় বেড়েই চলছিল এবং তাদের শক্তি ফারাওর বা ফেরআউনের (নামে পরিচিত) জন্য একটি হুমকি হয়ে উঠছিল।এই ভয় থেকেই ফারাও বা ফেরাউন (নামে পরিচিত) তাদের উপর জোড়পূর্বক কঠোর পরিশ্রমের দণ্ড ও দাসত্বের শৃঙ্খলকে চাপিয়ে দিলেন। তাঁর শাসনের স্বার্থে তিনি ইসরায়েলিদের কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করেন এবং তাদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু করেন। ফারাওর বা ফেরাঊনের (নামে পরিচিত) আদেশে ইসরায়েলিদের শ্রমদাস বানিয়ে তাদের দিয়ে পিথোম এবং রামেসিস নামে শহর নির্মাণ করানো হয়। ইট, চুন এবং কঠোর মাঠের কাজে তাদের জীবনকে তিক্ত করে তুললেন। তাদের জীবন হয়ে ওঠেছিল এক দুঃস্বপ্ন।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে, যতই নিপীড়ন বাড়ানো হলো, ইসরায়েলিরা ততই সংখ্যা ও শক্তিতে বৃদ্ধি পেতে থাকলো। এটি মিশরীয়দের মধ্যে এক ভয়ের জন্ম দেয়। এই ভয় থেকেই ফারাও বা ফেরাউন (নামে পরিচিত) এক নির্মম আদেশ দেন—যে কোনো হিব্রু ছেলে জন্মালে তাকে হত্যা করতে হবে এবং শুধু মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখা যাবে।
ফারাওর বা ফেরাঊনের (নামে পরিচিত) এই নির্মম আদেশের গোপন বিরোধিতা করেছিলেন দুজন ধাত্রী এবং তাদের নাম ছিলো —শিফ্রা এবং পূয়া। তারা ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন এবং ন্যায়ের পথে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তারা ফারাওর বা ফেরাঊনের (নামে পরিচিত) আদেশ অমান্য করে হিব্রু ছেলেদের গোপনে বাঁচিয়ে রাখেন। তাদের এই সাহসিকতা এবং ঈশ্বর-প্রীতি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে প্রশংসনীয় হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ, ঈশ্বর তাদের পরিবারকে সমৃদ্ধ করেন।
ধাত্রীদের এই সাহস এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস ও ভালোবাসা আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। এটি প্রমাণ করে যে, যে কোনো কঠিন সময়েও যদি মানুষ ন্যায় এবং ঈশ্বরের পথে অটল থাকে, তাহলে ঈশ্বর তাদের সাথে থাকেন এবং তাদের সহায়তা করেন।
ইসরায়েলিদের প্রতি ফারাওর বা ফেরাঊনের (নামে পরিচিত) এই নির্মমতার মূল কারণ ছিল তার নিজের ভয়, লোভ এবং অহংকার রাজত্ব টিকিয়ে রাখার। তিনি আশঙ্কা করতেন যে ইসরায়েলিরা সংখ্যায় আরো বেড়ে যাবে এবং যুদ্ধ শুরু হলে তারা মিশরের শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলাবে। ফারাওর বা ফেরাঊনের (নামে পরিচিত) এই অহংকার এবং সন্দেহই ইসরায়েলিদের জীবনে এ দুর্দশার সূচনা করে।
ইসরায়েলিদের উপর হওয়া এই অত্যাচার কেবল একটি জাতির উপর নিপীড়নের কাহিনি নয়; বরং এটি মানবজাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও। এটি আমাদের শেখায়, যেকোনো পরিস্থিতিতে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস রাখতে হবে। ঈশ্বরকে ভালোবেসে যদি আমরা সত্যের পথে চলি, তাহলে তিনি আমাদের রক্ষা করবেন এবং পুরস্কৃত করবেন।
ইসরায়েলিদের উপর মিশরের ফারাওয়ের বা ফেরাঊনের (নামে পরিচিত) এই নিপীড়নের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় অত্যাচার, ন্যায়বোধ, আনুগত্য এবং বিশ্বাসের গুরুত্ব। এটি একদিকে দাসত্ব ও নিপীড়নের নির্মম বাস্তবতাকে তুলে ধরে, অন্যদিকে ঈশ্বরের প্রতি অটুট বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং আনুগত্য ও ন্যায়বোধের মাধ্যমে সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করার শক্তি দেয়।
নির্বাসনের প্রথম অধ্যায়ের এই কাহিনী শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় বা ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কোনো শাসক বা শক্তিই মানবতার অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে দমন করতে পারে না, যদি সেই শক্তির ভীত ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা, আনুগত্য ও ন্যায়বিচারে প্রতিষ্ঠিত হয়।এই কাহিনি শুধু ইতিহাস নয়, এটি মানবজীবনের জন্য একটি চিরন্তন শিক্ষা।